যুদ্ধাপরাধ মামলা : ৩০ মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষের পথে
জান্নাতুল ফেরদৌস পান্না
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য দেশে গড়ে তোলা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচারকাজ দ্রæত সম্পন্ন করতে প্রসিকউশন টিম বন্ধ পরিকর বলে জানিয়েছেন সিনিয়র প্রসিকিউটর মুখলেসুর রহমান বাদল। জানা যায়, বিভিন্ন সময় আসামিদের দন্ড দেওয়া এবং তা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি শেষে কার্যকরও হয়েছে কয়েকটি। তবে এখনও নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ট্রাইব্যুনালে চলছে ৩০টি মামলার বিচারিক কার্যক্রম।
২০১৩ সালের ২০ জানয়ারি থেকে চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মোট ৫৫টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। সেসব মামলায় আসামি মোট ১৬৯ জন। এর মধ্যে রায় হওয়ার আগে ১৮ জন মারা যান। ওই ১৮ জনের মধ্যে রায় হওয়ার আগে কেন্দ্রীয় কারাগারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ১৬ জন। আর পলাতক অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে দুই জনের। মোট সাজাপ্রাপ্ত আসামি ১৪৯ জন। শুধু শিশু বয়স বিবেচনায় খালাস পেয়েছেন এক আসামি।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া আসামির সংখ্যা ১২। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পান ১০৬ আসামি। আমৃত্যু কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে ২৫ জনকে। সশ্রম কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা ছয় এবং খালাস পান একজন।
মোট মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আটক আসামি ৫৬ জন। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামির সংখ্যা ৫০। আমৃতু কারাদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ১২ জন। আমৃত্যু কারাদন্ড পাওয়া আটক আসামির সংখ্যা ১৩। এর মধ্যে তিন জন কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। তারা হলেন, গোলাম আজম, আব্দুল আলিম ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া আসামির সংখ্যা ১২। এর মধ্যে আব্দুল কাদের মোল্লা আপিল বিভাগের রায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পান এবং রায় কার্যকর হয়। সশ্রম কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামি ছয় জন।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কক্সবাজারের মহেশখালীর মৌলভী নুরুল ইসলামসহ ১৫ আসামির বিচার চলছে। এরমধ্যে বিচার চলমান অবস্থায় মারা গেছেন ছয় জন। মামলাটি বর্তমানে প্রসিকিউশন যুক্তিতর্কের পর্যায়ে রয়েছে।
এছাড়াও ময়মনসিংহের মো. রেজাউল করিম ওরফে এএসএম রেজাউল হকসহ সাত জনের বিরুদ্ধে চলমান মামলাটিও প্রসিকিউশন পক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। একইসঙ্গে নড়াইলের আব্দুল ওহাবসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন পক্ষের যুক্তিতর্ক, কুমিল্লার দাউদকান্দির মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার মো. আব্দুস সালামের মামলা আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক, যশোরের মনিরামপুরের সিদ্দিকুর রহমান গাজীর মামলাটি আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন, হবিগঞ্জের নবিগঞ্জের আবুল খায়ের গোলাপসহ অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাটি যুক্তিতর্ক শুনানির পর্যায়সহ ট্রাইব্যুনালে মোট ৩০টি মামলার বিচার কাজ চলমান রয়েছে।
এদিকে প্রসিকিউটর (প্রশাসন) মোখলেসুর রহমান বাদল বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমাদের চিফ প্রসিকিউটর মারা যান। সে অবস্থা কাটিয়ে যা জনবল আছে, তা নিয়ে আমরা চলতে পারবো বলে আশা করি। আমরা প্রসিকিউশন টিম বসে আরও আলাপ-আলোচনা করবো, কীভাবে ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া দ্রæত সম্পন্ন করা যায়।
ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য হাজির করা আসামিদের বয়স বিবেচনায় দ্রæত মামলা নিষ্পত্তির প্রত্যাশা আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ানের। তিনি বলেন, ‘এখনকার সব আসামিরাই বয়স্ক। তাই বয়সের কারণে তাদের জামিন ও কারাকর্তৃপক্ষকে আসামিদের চিকিৎসার বিষয়টি সুবিবেচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করি। তাহলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত সম্ভব।’