কিশোরগঞ্জে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা !

কিশোরগঞ্জে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা !

পঙ্​ক্তি ডেস্কঃ

কিশোরগঞ্জে তিন ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করা হয়েছে। রোববার (২৩ জুন) দুপুরে কিশোরগঞ্জের আমলি আদালত নং-১ এ মামলা দায়ের করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ওই আদালতের ব্যাঞ্চ সহকারী (পেশকার) শিখা। তিনি বলেন, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশিকুর রহমানের আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানাকে এফআইআর এর নির্দেশ দিয়েছে। অভিযুক্ত মামলার আসামিরা হলেন- আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন (৩০), তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। মোল্লা সুমনের ভাগনে কিশোরগঞ্জ শহরের বয়লা তারাপাশা এলাকার মো. তাজুল ইসলামের ছেলে নাজমুল হোসেন (হিরা) (২৮) ও সুমনের বড় ভাই মোশারফ হোসেন মোল্লা বাবুল (৪৩)। মোল্লা সুমন ও মোল্লা বাবুল একই এলাকার মো. আশরাফ উদ্দিনের ছেলে। তথ্য বলছে, অভিযুক্ত নাজমুল হিরা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ও মোল্লা বাবুল জেলা ছাত্রলীগের সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান যুব লীগের নেতা। ভুক্তভোগি ওই তরুনী কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার বাসিন্দা। মামলার বিবরণে জানা যায়, ভুক্তভোগী ওই তরুণী কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী। বাড়ি হাওরে হওয়ায় কলেজের কাছে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। কলেজে যাওয়া-আসার পথে সভাপতির ভাগনে হিরা পথরোধ করে প্রায় সময় প্রেম নিবেদন করতেন। একপর্যায়ে রাজি না হওয়ায় হিরা তার মামা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোল্লা সুমনের ভয় দেখিয়ে কলেজে যাওয়া-আসার পথ বন্ধ করে দেবে বলে হুমকি দেয়। এরপর হিরার সঙ্গে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে। যা অভিযুক্ত হিরা তার মোবাইল ফোনের মধ্যে স্থির চিত্র ও ভিডিও ধারণ করে রাখে। এভাবে অনেকদিন অতিবাহিত হলে মামলায় অভিযুক্ত সভাপতি মোল্লা সুমন ও তার বড় ভাই মোল্লা বাবুলকে ফোনে বিষয়টি জানালে তারা তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এই সুযোগে হিরা শারীরিক মেলামেশা অব্যাহত রাখে। এরপর বিষয়টি মানতে না পেরে ভুক্তভোগী ওই তরুণী আবারও চাপ সৃষ্টি করলে সিরাজ কাজীর মাধ্যমে ২০২৩ সালের ৮ জুন রেজিস্ট্রি করে কিন্তু কাবিনের কোনো কপি তাকে দেওয়া হয়নি। এরপর তরুণী জানতে পারেন- হিরা এর আগেও বিয়ে করেছেন এবং তার দুটি সন্তান ছিল। প্রায় সময় তার বাসায় বিভিন্ন মেয়ে নিয়ে শারীরিক সর্ম্পকে জড়ায়। মামা ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ায় এমন বেপরোয়া হয়ে ওঠে হিরা। ভুক্তভোগী তরুণী বিষয়টি সহ্য করতে না পেরে হিরাকে মৌখিকভাবে তালাক দিয়ে দূরে সরে যায়। এতেই ঘটে বিপত্তি। হিরা তার মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে দুইবারে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। আর এ ঘটনায় ভয়ভীতি দেখায় সভাপতি মোল্লা সুমন ও তার ভাই মোল্লা বাবুল। শুধু তাই নয়, সেই টাকা দিয়ে হিরা তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ক্রয় করেন। পরবর্তীতে নগ্ন ভিডিও ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মোল্লা সুমন একটি আইফোন ও স্যামসাং মোবাইল কেনে। মোল্লা বাবুলও একই কৌশলে তিন লাখ টাকা নিয়ে মোটরসাইকেল ক্রয় করে। তাতেও থেমে যায়নি অভিযুক্তরা। একের পর এক ভয় দেখিয়ে সর্বশেষ চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল হিরা আবারও শারীরিক সম্পর্ক করে ভিডিও ধারণ করে। তাদের ক্ষমতায় শেষ পর্যন্ত আর টিকতে পারেনি ভুক্তভোগী ওই নারী। অভিযুক্তদের সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় ধারণকৃত সব ভিডিও, স্থিরচিত্র ও অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। বর্তমানে অসহায় হয়ে সর্বশেষ আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন ভুক্তভোগীর পরিবার। কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, এখন পর্যন্ত আমার হাতে আদালতের নির্দেশনা এসে পৌঁছায়নি (সংবাদ লেখা পর্যন্ত)। আসামাত্র আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে, ইতোমধ্যে সভাপতি মোল্লা সুমনের বিয়েকে কেন্দ্র করে এক তরুণীর সঙ্গে তোলা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যা এখন সবার হাতে হাতে রয়েছে। যদিও তার দাবি এসব গুজব ও মিথ্যা। বর্তমান কমিটিতে থাকা জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফর রহমান নয়ন বলেন, ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিন সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। প্রায় পাঁচ বছর হয়ে যাচ্ছে এখন পর্যন্ত জেলা কমিটির নেতাকর্মীরা বসতে পারিনি। এটা আমাদের ব্যর্থতা। বর্তমান সভাপতির ছাত্রত্ব নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। তার বিয়ের বিষয়ে অনেক প্রমাণ রয়েছে আমার কাছে। আমাকেও অনেকে বলেছে। মোল্লা সুমন কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার এক বিএনপি নেতার মেয়েকে বিয়ে করেছে যা সবার জানা। তার স্ত্রী একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আমি আশা করি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা এসব বিষয়ে অবহিত আছেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিষয়টি তাদের জানিয়েছে। বর্তমান কমিটির এখন কোনো কার্যক্রম নেই। নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে সংগঠনটি। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ উমান খান জানান, সভাপতির বিয়ের বিষয়ে তার কোনো কিছু জানা নেই। তবে একজন ব্যক্তি তো প্রেম করতে পারে। সেটা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারাই বলে দিয়েছেন। ছাত্রলীগের নেতারা প্রেম করবে এটাই স্বাভাবিক। আর জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে কমিটি করা হবে। সভাপতির বিয়ের বিষয়টি নিয়ে যখন এতকিছু তখন সরেজমিনে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নে বসবাস করেন ওই তরুণীর পরিবার। তিনি ঢাকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে থাকেন। ওই তরুণীর সঙ্গে দীর্ঘদিনের প্রেম চলছিল সভাপতি মোল্লা সুমনের। একপর্যায়ে পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে গোপনে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের বিষয়টি যেন জানাজানি না হয় সেজন্য উপস্থিত থাকা ব্যক্তিদের সতর্ক করা হয়। নিজেদের এত সতর্ক থাকার পরও কয়েকদিন আগে ওই তরুণী তার নিজের ফেসবুক ওয়ালে দুটি ছবি পোস্ট করেন। যেখানে দেখা যায়, সভাপতি হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে বসে আছেন। আবার পরক্ষণই ওই তোড়াটি তরুণীর হাতে দিচ্ছেন। এরপর এক এক করে সবার মধ্যে জানাজানি হয়ে যায় বিয়ের বিষয়টি। তরুণীর গ্রামে গেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রায় বছর হতে যাচ্ছে ওই তরুণীর সঙ্গে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমনের বিয়ে হয়েছে গোপনে। বিয়ের বিষয়টি গোপন রাখতে চাইলেও সেটি আর গোপন থাকেনি। এখন সবার জানা হয়ে গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তরুণীর এক ঘনিষ্ঠজন বলেন, বিয়ে করা ওই যুবকের নাম আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন। সে ছাত্রলীগের নেতা। শহরের সতাল এলাকায় বাসা আছে। গ্রামের বাড়ি বৌলাই ইউনিয়নে। প্রায় এক বছর হয়ে যাচ্ছে বিয়ের। বিয়ের কথা বলা নিষেধ আছে। ঈদের পর মেয়ে বাড়িতে বেড়াতে আসছে। আমি মাত্র তাদের বাড়ি থেকে ঘুরে আসলাম। এ ব্যাপারে কথা হয় ওই তরুণীর সঙ্গে। তার ভাষ্যমতে- বিয়ে নয়, মোল্লা সুমনের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। যা হৃদ্যতার সম্পর্ক। আমরা দীর্ঘদিনের পরিচিত। আমার নামে বিয়ের যে কথা ছড়ানো হচ্ছে তা মিথ্যা। ফেসবুকে ব্যবহৃত ছবিগুলোতে কি কোথাও লেখা আছে ওইটা সুমন। বা আমাদের বিয়ে হয়েছে। এগুলো মানুষ গুজব ছড়াচ্ছে। আমি তাদের ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেব। আমার সম্মান নষ্ট করা হয়েছে। আমার সামনে কয়েকটা পরীক্ষা আছে এজন্য এখন চুপ আছি। সময় দিতে পারছি না বলে যা খুশি তা করে যাচ্ছে। বিয়ে যখন করব ধুমধাম করে করব। বিয়ের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয় সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমনের কাছে। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে ওই তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। এখনো বিয়ে করিনি। প্রেম করা তো আর দোষের না। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রেম করতে পারবে। যা ছড়ানো হচ্ছে সব মিথ্যা। বিয়ে করলে সবাই জানবে।কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমনের ব্যাপারে বিয়েসহ অনেক অভিযোগ শুনেছি। আমরা বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছি। প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Share This