বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অভ্যুত্থানের অন্যতম দাবি ছিল সংস্কার। বিষয়টি আমরা হয়তো কেউ ভুলে গেছি, আবার কেউ বলার চেষ্টা করছে যে, সংস্কার আরও পরে হলেও হবে। আবার কেউ বলছেন, স্বৈরাচার যেন ফিরে না আসে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর কোনও দিন নয় এই স্বৈরাচার, কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা, ফ্যাসিবাদ যেন ফিরে না আসে। তার জন্যই সংস্কার দরকার।
তিনি বলেন, আমাদের ভুলে গেলে চলবে না আমাদের অন্যতম দাবি ছিল গভীর সংস্কার। তাই সংস্কারের পক্ষে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের গণমাধ্যম এখানে খুবই ভালো ভূমিকা পালন করছে। আর আমরা যে সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা করছি— এটা প্রথমে নিজেরা পরিষ্কার হতে হবে, তারপর মানুষকে পরিষ্কার করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার কাছে খসড়া কিছু মতামত জমা দেওয়ার কথা জানিয়ে নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, সেখানে আমরা বলেছি, নো ইভিএম এবং ইভিএম যারা করেছে তাদের বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।
একইসঙ্গে গত কয়েকটি নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, আইন অনুযায়ী তাদের প্রত্যেকেরই ২ থেকে ৭ বছর শাস্তি হওয়ার কথা জানিয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, শাস্তির বিধান থাকলেও উল্লেখযোগ্যভাবে কারোই শাস্তি হয়নি। আর আগামী নির্বাচনগুলোতে ‘না ভোটের’ বিধান যুক্ত করার বিষয়েও প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। কমিশন প্রধান বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, নিজেদের প্রতি নিজেদের আস্থা ফিরিয়ে আনা। ৫৩-৫৪ বছরেও আমরা দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সমুন্নত করতে পারিনি। আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা নির্বাসনে চলে গিয়েছে। এখন কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করে আগাছাগুলো পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, নির্বাচনি মাঠকে সমতল করা। এর মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। আর পরবর্তী যে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসবে, তারাও মনে রাখবে যে, কী প্রেক্ষাপটে তারা ক্ষমতায় এসেছে।
তিনি বলেন, আমরা আশা করছি— তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে নির্বাচন ব্যবস্থা থাকলে ২-৩ টার্মেই মানুষ তাতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। তখন সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা একটি নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হবে। সেই আকাঙ্ক্ষা থেকেই এই সংস্কারের প্রস্তাব করা হচ্ছে। আগে সংস্কার নাকি আগে নির্বাচন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর আগেও আমরা বলেছি, নির্বাচন হলে তো আগেই হতে পারতো। সংস্কার করাই হচ্ছে নির্বাচনের জন্য। আমরা চাচ্ছি নির্বাচন যেন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়। এখন যে অপরিচ্ছন্ন মাঠ এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। সেজন্য সংস্কার করতেই হবে। এই সংস্কারের পরে আশা করি— নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। এর মাধ্যমে (সংস্কার) আমাদের মধ্যে একটি সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ইউনিয়ন পর্যায়ে ভাগে ভাগে নির্বাচন দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে এব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।