জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

পঙ্​ক্তি ডেস্কঃ

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে প্রাণহানি ও সহিংসতার সুষ্ঠু তদন্তে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (জুলাই ৩১) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৪’ উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘এ বিষয়ে ইতোমধ্যে আমরা জুডিশিয়াল কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কারও দাবির অপেক্ষায় আমি থাকিনি। আগেই জুডিশিয়াল কমিটি করে দিয়ে, আজকে আবার আমরা নির্দেশ দিয়েছি আমরা একজন জজ সাহেবকে দিয়ে করেছিলাম। সেটা আমি বলেছি—আরও দুই জন জজ সাহেবকে দিয়ে, আরও দুজন লোকবল বৃদ্ধি করে দিয়ে এবং তাদের তদন্তের পরিধি বাড়ানো (হয়েছে)।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জাতিসংঘের কাছেও আবেদন করেছি। আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন সংস্থা আছে, বিশেষ করে বিদেশে; তাদের কাছেও আমরা সহযোগিতা চাই। যেন এই ঘটনার যথাযথ সুষ্ঠু তদন্ত এবং যারা এর সঙ্গে দোষী তাদের সাজার ব্যবস্থা (করা যায়)।’ কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নিজের কোনও ঘাটতি ছিল না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি, এখানে আমার কোনও ঘাটতি ছিল না। যারা (আন্দোলনে) বসেছিল, আমি বারবার আলোচনা তাদের দাবি মানা। আর তাদের দাবি মানবো কি, যেটা আমি করে দিয়েছি সেটাই তো, এটা তো আমারই করা, ইস্যুটা তো আমারই। আপিল করা হয়েছে অ্যাপিলেট ডিভিশনে। তারপরও এই যে একটা ঘটনা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে দেশকে পেছনে টেনে নেওয়ার এই চক্রান্তে যারা জড়িত, সেটা আপনাদের খুঁজে বের করা উচিত।’

জেলেদের মধ্যে প্রতীকী স্মার্ট আইডি কার্ড বিতরন করছেন প্রধানমন্ত্রী তিনি আরও বলেন, ‘ওই একাত্তরে যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল, তাদের চক্রান্ত বারবার আমাদের দেশকে পিছিয়ে নিয়ে গেছে। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে কষ্টের, সবচেয়ে দুঃখের।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই আন্দোলনের নামে যে সসব ঘটনা ঘটেছে, ধ্বংসাত্মক কাজ করা হয়েছে; তাতে অনেক তাজা প্রাণ ঝরে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘জানি না, অপরাধটা কী ছিল আমার? যে ইস্যুটা নেই, সেটা নিয়ে আন্দোলনের নামে এই ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করে দেশের অর্জনকে নষ্ট করা, আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করাতে কে কী অর্জন করলো, সেটাই আমার প্রশ্ন?’ সরকার প্রধান বলেন, ‘আমার কাছে ক্ষমতা কোনও ভোগের বস্তু নয়, আমি তো আরাম-আয়েশ করার জন্য ক্ষমতায় আসিনি। দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি দেশকে একটু উন্নত করতে। যেটা সফলভাবে করতেও পেরেছি। আজ বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। সেই মর্যাদাকে কেন নষ্ট করা হলো?’ সে প্রশ্ন উত্থাপন করে এর বিচারের ভার তিনি দেশবাসীর কাছে দিয়ে দেন।

১৯৮১ সালে বাংলাদেশে আসার পর থেকে গুলি, বোমা পুঁতে রেখে, গ্রেনেড হামলা করে প্রধানমন্ত্রীর ওপর বহুবার হত্যা প্রচেষ্টার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমি তো জীবনের পরোয়া করিনি। দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করার পাশাপাশি ভূমিহীন-গৃহহীনকে বিনামূল্যে ঘর করে দেওয়া, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করে মানুষের জীবনযাপনকে আরও সহজ করে দেওয়াই আমার লক্ষ্য ছিল। কিন্তু যেসব জিনিস মানুষকে সেবা দেয়, সেগুলোই হামলাকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হলো।’

মৎস্যচাষে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীকেও অনুষ্ঠানে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়) আবেগতাড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যেহেতু স্বজন হারিয়েছি। স্বজন হারানোর বেদনা আমি বুঝি। তাই যারা আপনজন হারিয়েছেন তাদের প্রতি আমার সহমর্মিতা জানাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস করেছে। স্থাপনা যে ধ্বংস করেছে সেগুলোতো পুনর্গঠন করা যাবে। কিন্তু যে প্রাণগুলো ঝরে গেলো, সেগুলোতো আমরা আর ফিরে পাবো না।’অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সাতটি ক্যাটাগরিতে ২২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাঝে ‘জাতীয় মৎস্য পদক-২০২৪’ প্রদান করেন। পুরস্কার হিসেবে ৬টি স্বর্ণ, ৮টি রৌপ্য ও ৮টি ব্রোঞ্জ পদক, সম্মাননা স্মারক এবং পুরস্কারের অর্থ প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে জেলেদের মধ্যে স্মার্ট আইডি কার্ডও বিতরণ করেন। ২২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি মৎস্যচাষে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীকেও অনুষ্ঠানে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। দেশের মৎস্য খাতের উন্নয়নের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার স্বাগত বক্তৃতা করেন। মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ আলমগীর পুরস্কার প্রদান পর্বটি সঞ্চালনা করেন।

Share This