আমার বাসায় কাজ করেছে, সে ৪০০ কোটি টাকার মালিক: প্রধানমন্ত্রী

আমার বাসায় কাজ করেছে, সে ৪০০ কোটি টাকার মালিক: প্রধানমন্ত্রী

পঙ্​ক্তি ডেস্কঃ

নিজের বাসার কাজের লোক ৪০০ কোটি টাকার মালিক বনে গেছে বলে জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলেও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর পার্সোনাল এইড (ব্যক্তিগত সহকারী) পদে একসময় কর্মরত জাহাঙ্গীর আলমকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাসায় কাজ করে গেছে, পিয়ন, যে এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। হ্যাঁ, এটা বাস্তব কথা। তো কী করে বানালো এই টাকা! যখনই আমি জেনেছি তাকে বাদ দিয়ে কার্ড-টার্ড সব সিজ করে আমার ব্যবস্থা আমি নিয়েছি। এটা তো হয়, এটা করে। ধরা পড়লে তো চোখে আসে। তাছাড়া তো হয় না। যখন ধরা পড়ে তখন ব্যবস্থা নিই।

চীন সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা প্রশ্নে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জাহাঙ্গীরের প্রসঙ্গটি নিয়ে আসেন। তবে তিনি তার নাম উচ্চারণ করেনি। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে রবিবার (১৪ জুলাই) বিকাল ৪টায় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়নের নাহারখিল গ্রামের মৃত রহমত উল্যাহর ছেলে মো. জাহাঙ্গীর আলম বর্তমান সরকারের টানা চার মেয়াদের প্রথম দুই টার্মের পুরোটা এবং তৃতীয় টার্মের প্রথম কিছু দিন প্রধানমন্ত্রীর পারসোনাল এইড হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলে থাকার সময়ও জাহাঙ্গীর আলম তার বাসভবন সুধা সদনে ব্যক্তিগত স্টাফ হিসেবে কাজ করেছেন। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় সরকারের ২০১৮-২৩ মেয়াদের প্রথম দিকে চাকরিচ্যুত হন জাহাঙ্গীর। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে চাকরি না থাকলেও ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতারণার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নজরে এলে ২০২৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর গণমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তির দিয়ে জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কোনও সম্পর্ক নেই বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।

নিচের দিক থেকে দুর্নীতি বেশি হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি নিচের দিক থেকেই বেশি হচ্ছে, এটা হচ্ছে বাস্তবতা। উৎসমুখ, কোন জায়গায় কোন ‍উৎসমুখ, কয়টা ‍খুঁজবেন। এখানে কোন ড্রাইভার কত টাকা বানালো, কে কী টাকা বানালো! এখন ড্রাইভার লেভেলে যদি করে, সেটা খোঁজ করে বের করে আজ ধরছি বলেই জানতে পারছেন। এতকাল তো জানতে পারেননি।

কোভিডকালের সরকারি কেনাকাটার প্রসঙ্গে টেনে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে সব জায়গায় দুর্নীতি তো এমন পর্যায়ে ছিল যে কোনও কাজই তো করা যেত না। সেখান থেকে ধীরে ধীরে আমরা অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসছি। আর কোভিডের সময় বিষয়টা ছিল, কেনাকাটার যে নিয়ম যেমন টেন্ডার দেওয়া… এগুলো করতে গেলে তো রোগী বাঁচানো যেত না। তখন আমাদের কতগুলো সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। যেমন আমার সিরিঞ্জ কিনতে হবে, এটা টেন্ডার দিয়ে করতে গেলে ভ্যাকসিন দেবো কবে? আমি সোজা প্লেন পাঠিয়ে দিয়েছি কোথায় পাওয়া যায়? ছোটটা পাওয়া যায় না দাম বেশি। আমার দরকার, দাম বেশি দিয়েও আনতে হবে। তিন দিনের মধ্যে প্লেন পাঠিয়ে চার দিনের মধ্যে নিয়ে এলাম। এখন যদি ওটার দুর্নীতি ধরতে চান ধরতে পারেন। কিন্তু তখন আমার কাছে ছিল মানুষ বাঁচানো ফরজ।

মানুষকে আমি কীভাবে বাঁচাবো। ভ্যাকসিন বুকিং দিতে হবে। সরকারিভাবে করতে গেলে দীর্ঘসময়…টেন্ডার করতে হবে, টাকা দিতে হবে, হেনতেন। আমি কী করলাম, বেক্সিমকোকে বললাম এত টাকা আগেই ডিপোজিট দিয়ে বুকিং দিতে হবে। এটা প্রাইভেট সেক্টর-প্রাইভেট সেক্টর দিলে সমস্যা নেই। টাকা আমি দিয়ে দিচ্ছি, তুমি বুকিং দাও। এভাবে বুকিং দেওয়ালাম। ভ্যাকসিন রাখার জন্য ফ্রিজার দরকার। ফ্রিজ কিনতে হবে। টেন্ডার দিয়ে কিনতে গেলে কত সময় লাগবে? সোজা অনলাইনে বুকিং দিয়ে কোথায় পাওয়া যায়। প্লেনে করে উঠায়ে নিয়ে আসবে। স্যানিটাইজারের বিরাট মেশিন। প্লেনে ধরে না। সেটা ভেঙে নিয়ে আসা হলো। আমি তো এভাবে কাজ করেছি। যদি দুর্নীতি ধরতে চান এসব জায়গায় দুর্নীতি ধরতে পারবেন, বলেন সরকারপ্রধান।

এটা শুধু আমাদের দেশের সমস্যা নয়

দুর্নীতি কেবল বাংলাদেশের সমস্যা নয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এটা শুধু আমাদের দেশের সমস্যা নয়। সারা বিশ্বেই যে দেশটা অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হয় সেখানে কিছু অনিয়ম কিছু লোকের হাতে চলে যায়। যারা অপাঙক্তেয় তাদের হাতে কিছু টাকা পয়সা চলে যায়। তারা বানায়। তারা তো অপেক্ষা করে থাকে।

কী কারণে হিরো হয়ে যায়, আর আমরা তো জিরো!

সচিবালয়ের ফাইল চুরির প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, সাংবাদিকদের তথ্য জোগাড় করা এক জিনিস। আর ফাইল চুরি আরেক জিনিস। আমি ভ্যাকসিন কিনবো, আমার সেখানে নেগোসিয়েশন হচ্ছে, জরুরি পেপার। অফিসাররা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে। ফাইলটা রেখে কেবল একটু বাইরে গেলো, অমনি আপনাদের স্বনামধন্য পত্রিকার এক সাংবাদিক ঢুকে সেই কাগজ চুরি করতে গেলো। অফিসার এসে ধরলো, সে সেটা নিয়ে বাথরুমে। সেখান থেকে ধরা হলো, সেটা ঢোকালেন তার শাড়ির ভেতরে। সেখান থেকে টেনে বের করা হলো। আর তা বিরাট অপরাধ হয়ে গেলো। সে যে ফাইল চুরি করতে গেলো এটা কোনও অপরাধ নয়। ফাইল চুরির জন্য পুরস্কারও পেলো। কোন বড় দেশ তাকে পুরস্কার দিয়ে দিলো। এটা কী দুর্নীতি? ডাকাতি? চুরি? কোনটা? কী ডেফিনেশন দেবেন বলেন আমাকে।

এই ঘটনা তো ঘটে। এর আগে নৌপরিবহনে ঢুকেও এটা করেছে। পরে মুচলেকা দিয়ে বেরিয়ে আসে। এরপর আরেক জায়গায়। হিরোইন হয়ে গেলো। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হয়ে গেলো। যাবো কোথায় বলেন! অথচ মিথ্যা ভুয়া রেকর্ড করে ছেড়ে দিচ্ছে। এর আগে একজন মিথ্যা পাশবিক নির্যাতনের অভিযোগ আনলো। পরে সেও পুরস্কার পেয়ে গেলো। এই যে কী কারণে হিরো হয়ে যায়! আর আমরা তো জিরো আছি।

জিরো টলারেন্স আমি করেই ছাড়বো

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, যখন ধরছি, হাতেনাতে ধরা পড়বেন যারা, ব্যবস্থা আমরা নেবো।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ কেন, সারা বিশ্বে বড় বড় পত্রিকা-চ্যানেলের মালিক যারা বড়লোক তারাই হয়। সাধারণ মানুষ তো এটা চালাতে পারে না। তাদের ধরতে গেলে নানা কথা শুনতেও হবে। তারপরও আমি যখন- আমি ছাড়বো তো না। অন্য কারও কথা জানি না। আমি তো ছাড়বো না। সে যে-ই হোক। হাত যখন দিয়েছি, আমি ছাড়বো না। যেখানেই হোক যে-ই হোক, আমি কেয়ার করি না। আপন-পর কোনও কিছু আমি জানি না। যেখানেই পাবো… আমি যখন জিরো টলারেন্স বলেছি, যতদূর পারি জিরো টলারেন্স আমি করেই ছাড়বো।

Share This