মার্কিন নির্বাচন : ট্রাম্পই যাচ্ছেন হোয়াইট হাউসে?
পঙ্ক্তি ডেস্কঃ
বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দাবিদার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, ডেমোক্রেটি দলীয় প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। এ নিয়ে চলছে তুমুল তর্ক-বিতর্ক। সারাবিশ্ব অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে মার্কিন নির্র্বাচনের ফলাফলের দিকে। বাংলাদেশেও মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কেউ বলছেন ডেমোক্র্যাদের নির্বাচনে পরাজিত করা দরকার। কারণ হিসেবে বলেছেন, ডেমোক্র্যাটরা নীরবে বিশ্বকে শাসন করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই প্রতিবেদকের সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপকালে প্রবাসী বাংলাদেশি আনোয়ার হোসেন
চৌধুরী বলেছেন, ট্রাম্পই জিততে পারেন। আরেক প্রবাসী বাংলদেশি মাহবুব মোর্শেদ মামুনও একই কথা বলেছেন। দুই প্রবাসী বাংলাদেশি বলেছেন, কারণডেমোক্র্যাটরা তামাম দুনিয়াকে রণক্ষেত্রে পরিণত করেছে ।
বাইডেনের দল আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের মদতদাতা। মধ্যপ্রাচ্যে সঙ্কট, রাশিয়া-ইউক্রেন-যুদ্ধ, এবং ইউরোপসহ বিশ্বের বেশ কিছু অঞ্চলে সংঘাতময় পরিস্থিতির জন্য তারাই দায়ী। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম গুলোর পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের পাল্লাভারি।
কমলাকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চান না রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পুতিন একথা বলেছেন মস্কারা করেই। তার অনেক কথা ইঙ্গিত দেয়, তিনি আসলেই ট্রাম্পের জয়ের পক্ষে।
এদিকে মার্কিন বংশোদ্ভুত ভারতীয় নাগরিক হয়েও কমলা বর্ণবাদ ও অভিবাসন বিরোধী বক্তব্য দেওয়াতে প্রবাসী ভারতীয়রাও তাকে ভোট দেয়নি বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে।
চাথাম হাউসের রাশিয়া এবং ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের সহযোগি ফেলো টিমোথি অ্যাশ আল-জাজিরা’কে বলেছেন, ‘পুতিন বিভিন্ন কারণে ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চান।’ পুতিন মনে করেন,ট্রাম্প রাশিয়ার প্রতি নমনীয় এবং তিনি ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা কমানো ও রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার মতো পদক্ষেপ নিতে পারেন।
অ্যাশ আরো বলেছেন, ‘আমার মতে, পুতিন ট্রাম্পের দিকে তাকিয়ে নিজের কর্তৃত্ববাদী রূপই দেখতে চান। পুতিন সম্ভবত মনে করেন, তিনি ট্রাম্পকে ছাড়া আর কিছুই বোঝেন না। ’তবে রুশ বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, মস্কোর কর্মকর্তারা বলেছেন, নির্বাচনে যে দলই জয়ী হোক না কেন, রুশদের প্রতি মার্কিনীদের নেতিবাচক মনোভাব কখনো কমবে না।
রুশদের মতো, দুই প্রার্থীর কাউকেই সমর্থন দেননি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। তিনি বলেছেন, ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান উভয়ই চীনের প্রতি কঠোর। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালিন চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। ২০১৮ সালে চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ২শ’ ৫০ বিলিয়ন ডলারের শুল্ক আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প।
শি বলেছেন, যদি আবারো ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত ১শ’ ১০ বিলিয়ন ডলারের পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করবেন না।
শি বলেছেন, ডেমোক্র্যাটরাও বিশ্বব্যাপী চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান রয়েছেন।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেন নি। তবে এটা ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, তিনি ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকেছেন।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে নেতানিয়াহু সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। ২০১৯ সালে ইসরাইলি-আমেরিকান কাউন্সিলে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘হোয়াইট হাউসে ইহুদি রাষ্ট্রের জন্য এই প্রেসিডেন্টের মতো ভালো বন্ধ ুকখনো পাওয়া যাবে না। ’অপরদিকে নেতানিয়াহু ২০২০ সালে এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ট্রাম্প ‘হোয়াইট হাউসে ইসরাইলিদের ঘনিষ্ট বন্ধু। তবে বাইডেন নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর মধ্যে সম্পর্কের ফাটল ধরে। বাইডেন শপথ নিলে নেতানিয়াহু তাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। পরে এক সাক্ষাতকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ‘প্রতারিত’ হয়েছেন।
এদিকে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ফিলিস্তনের স্বাধীনতাকামী হামাসের সাথে ইসরাইলিরা যুদ্ধ শুরু করলে বাইডেন প্রশাসন ইসরাইলে বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম পাঠিয়েছিল।
গত ৪ অক্টোবর বাইডেন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, নেতানিয়াহু ‘ইন্টেনশনালী’ গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি থেকে সরে আসছেন কিনা তা তিনি জানেন না। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত মার্কিন নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য ‘উদ্দেশ্যমূলক’ একটি চুক্তি করেছিলেন।
নেতানিয়াহুর নাম উল্লেখ করে বাইডেন সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, আমার চেয়ে কোনো প্রশাসন ইসরাইলকে বেশি সাহায্য করেনি। আমি মতে নেতানিয়াহুর বিষয়টি মনে রাখা উচিত ছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলাকে বেশিরভাগ ইউরোপীয় নেতারা পছন্দ করেন।
এদিকে ট্রাম্প বেশ কয়েকবার ন্যাটো থেকে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে পলিটিকো’র রিপোর্ট বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।