হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারে ‘সুপারিশ করবে’ ২ কমিটি

হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারে ‘সুপারিশ করবে’ ২ কমিটি

পঙ্​ক্তি ডেস্কঃ

রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও অন্যান্য কারণে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, নিরীহ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ‘হয়রানিমূলক সব মামলা প্রত্যাহারের’ সুপারিশ করার জন্য দু্ইটি কমিটি গঠন করেছে সরকার।

এর মধ্যে একটি জেলা পর্যায়ের কমিটি, আরেকটি মন্ত্রণালয়ের।

রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

তবে কোন সময়ের দায়ের করা মামলাগুলো হয়রানিমূলক, তা উল্লেখ করা হয়নি বিজ্ঞপ্তিতে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চার সদস্যের জেলা কমিটিতে সদস্য সচিব হবেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।

এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন পুলিশ সুপার (মহানগর এলাকার জন্য পুলিশের একজন ডেপুটি কমিশনার), পাবলিক প্রসিকিউটর (মহানগর এলাকার মামলাসমূহের জন্য মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর)।

আর আইন উপদেষ্টার নেতৃত্বে মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটিতে ছয় সদস্য থাকবেন। এই কমিটির নেতৃত্ব দেবেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা।

এছাড়া সদস্য হিসেবে কমিটিতে থাকবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, অতিরিক্ত সচিব (আইন ও শৃঙ্খলা), যুগ্মসচিব (আইন) এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি (যুগ্ম-সচিব পর্যায়ের নিচে নয়)। এছাড়া কমিটির সদস্য-সচিব হবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের আইন-১ শাখার উপসচিব/সিনিয়র সহকারী সচিব/ সহকারী সচিব।

জেলা পর্যায়ের কমিটির কাজ

• মামলা প্রত্যাহারের জন্য আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদনপত্র দাখিল করতে বলা হয়েছে।

• আবেদনের সাথে এজাহার ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে চার্জশিটের সার্টিফাইড কপিও জমা দিতে হবে।

• এদিকে আবেদন প্রাপ্তির সাত কর্মদিবসের মধ্যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দরখাস্তটি জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর (ক্ষেত্র বিশেষে মেট্রোপলিটান পাবলিক প্রসিকিউটর) এর কাছে মতামতের জন্য পাঠাতে হবে।

• আবেদন প্রাপ্তির ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে পাবলিক প্রসিকিউটর (ক্ষেত্র বিশেষে মেট্রোপলিটান পাবলিক প্রসিকিউটর) তার মতামত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠাবেন।

• পরে পাবলিক প্রসিকিউটরের মতামত সহকারে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবেদনটি ৭ কার্যদিবসের মধ্যে জেলা কমিটির সভায় উপস্থাপন করবেন।

• জেলা কমিটির কাছে যদি মনে হয় মামলাটি রাজনৈতিক বা অন্য কোনো উদ্দেশে হয়রানির জন্য দায়ের করা হয়েছে, তাহলে মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য কমিটি সরকারের কাছে সুপারিশ করবে।

• পরবর্তীতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উক্ত সুপারিশ, মামলার এজাহার, চার্জশিটসহ আবেদন প্রাপ্তির ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত “ছক” অনুযায়ী তথ্যাদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে।

মন্ত্রণালয়ের কমিটির কাজ

মন্ত্রণালয় পর্যায়ের এই কমিটি জেলা কমিটির কাছ থেকে সুপারিশ প্রাপ্তির পর মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটি সুপারিশগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করবে এবং প্রত্যাহারযোগ্য মামলা চিহ্নিত করে তালিকা প্রস্তুত করবে। এবং মামলা প্রত্যাহারের কার্যক্রম গ্রহণ করবে।

দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর আওতাধীন মামলাসমূহের মধ্যে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাগুলো দ্য অরিজিনাল ল অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট, ১৯৫৮ এর ১০ (৪) থারার ধারার বিধানমতে কমিশনের লিখিত আদেশ ব্যতীত প্রত্যাহার করা যায় না। এ কারণে এ ধরণের মামলা চিহ্নিত করে তালিকা তৈরি করতে হবে। এ ধরণের মামলার বিষয়ে করণীয় পরবর্তীতে নির্ধারণ করা হবে।

তদন্তে সম্পৃক্ততা না মিললে মামলা থেকে নাম বাদ, পুলিশের নির্দেশনা

আইন হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারো নেই: উপদেষ্টা

ক্ষমতার পালাবদলের পর গত এক মাসে বিগত সরকারের মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে প্রায় তিনশ মামলা হয়েছে আদালতে এবং দেশের বিভিন্ন থানায়।

এসব মামলায় নাম প্রকাশ করে আসামি করা হয়েছে ২৬ হাজারের বেশি মানুষকে; অজ্ঞাতপরিচয় আসামি রয়েছে দেড় লাখের ওপরে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে জুলাইয়ের প্রথম দিন থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে গুলি চালাতে নির্দেশ দিয়ে হত্যা এবং নির্যাতন চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে এসব মামলায়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামেই দেড়শর মত মামলার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, যার মধ্যে ১১৯টিতেই হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। বাকি ১১টি মামলা হয়েছে হত্যাচেষ্টা ও অপহরণের অভিযোগে।

গণআসামি করে দায়ের করা এসব মামলা বিচারের ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।

তারা বলছেন, জুলাই-অগাস্টের গণ আন্দোলনে হতাহতের বিচার চেয়ে দেশজুড়ে যেসব মামলা হচ্ছে, সেগুলোর ধরণ যেন আওয়ামী লীগ আমলের ‘গায়েবি’ মামলার মতই। এতে করে ভুক্তভোগীর পরিবার সঠিক বিচার পাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে।

যাচাই-বাছাই না করে মিথ্যা বা ভুয়া মামলা দিয়ে নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি না করার অনুরোধ এসেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে।

এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যেসব মামলা হচ্ছে, সেগুলোর প্রাথমিক তদন্তে কোনো আসামির সম্পৃক্ততা না পাওয়া গেলে মামলা থেকে তার নাম প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশের সদর দপ্তর।

সেই সঙ্গে সঠিক তথ্যপ্রমাণ ছাড়া এসব মামলায় কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা যাবে না বলেও নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ।

এছাড়া সাম্প্রতিক মামলা নিয়ে সমালোচনার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, অতীতের মত পুলিশ এখন আর মামলা দিচ্ছে না।

“আগে পুলিশ কিন্তু মামলা দিত, এই সময়ে কোনো পুলিশ কী একটা মামলা দিয়েছে? আগে পুলিশ ১০ জনের নাম দিয়ে ১০০ জনের নাম দিত অজ্ঞাত। কিন্তু এখন পুলিশ কিন্তু মামলা দিচ্ছে না, এটা সাধারণ পাবলিকরা দিচ্ছে।”

তিনি বলেন, “যদি পুলিশ একটা এমন মামলা দেয়, আপনি আমার কাছে আনেন যে- ১০ জনরে নাম দিয়ে ৫০০ জনকে অজ্ঞাত করে দেওয়া হয়েছে। এখন যারা মামলা দিচ্ছে, এটাতো সাধারণ জনগণ।”

জনগণের প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বার্তা হল, মামলায় যেন সত্যিকারের অপরাধীদের নাম আনা হয়।

এছাড়া কোনো নিরীহ নাগরিক যেন হেনস্তার শিকার না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন সরকারের এই উপদেষ্টা।

Share This